আমার বাসার পাশেই নামকরা বড় একটি হাইস্কুল আছে। স্কুলের গেটে প্রায়ই একজন মহিলা পাগল বসে থাকেন। অনেকে তাকে মন্টুর মা বলে ডেকে থাকেন। আমি জানি না তিনি কোন মন্টুর মা আর তাছাড়া এটা আমার ভাড়ায় বাসা হওয়ার কারনে এই এলাকার লোকজনকে আমি তেমন চিনিও না।
যাহোক মন্টুর মাকে আমাদের কলোনী থেকে মাঝে মাঝে কিছু কিছু খাবার সরবরাহ করা হয়। মাঝে মাঝে আমার স্ত্রীও তাকে কিছু কিছু খাবার দিয়ে থাকে।
গত কিছুদিন আগে মন্টুর মাকে আমার স্ত্রী খাবার দিলে আমার বড় মেয়ে তিশা (দশম শ্রেণীর ছাত্রী) পাগলীটির দিকে গভীর মনোযোগের সাথে পর্যাবেক্ষণ করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে সে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে-
আচ্ছা আম্মু, এই যে মহিলাটি পাগল হয়ে পথে পথে ঘুরছে এবং অন্যের দেওয়া খাবার এর উপর নির্ভশীল হয়ে বেচে আছে এর জন্য দায়ী কে?
ওর আম্মু একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায় এবং জানতে চাই দায়ীকে মানে?
মেয়ের জবাব- না মানে ইনি যে পাগল হয়েছে নিশ্চয় এর পিছনে কোন কারন আছে তাই না! হতে পারে তার বাচ্চারা অথবা তার স্বামী কিম্বা তার ফ্যামিলির কেউ এমন কোন কাজ করছে যা সে সহ্য করতে পারেনি বা নিতে পারেনি তাই মেন্টালী ডিস্টার্ব হয়ে পাগল হয়ে গেছে।
হতে পারে আবার না ও হতে পারে। তো তা দিয়ে তুমি কি বুঝাতে চাইছো? পাল্টা প্রশ্ন করে আমার ওয়াইফ।
যে কারনেই হোক সে তো এখন স্বাভাবিক নেই তাই না? সে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। আমরা যা কিছু ভাবতে পারি বুঝতে পারি বলতে পারি তিনি তো তেমনটি নন, তাই না? আমার মেয়ের প্রশ্ন।
তোমার কথা সবই ঠিক আছে কিন্তু তুমি ঠিক কি বুঝাতে চাইছো ক্লিয়ার না- তার মা জবাব দিল।
না ধর কোন কারনে তুমি পাগল হয়ে গেলে, আর রাস্তার মানুষজন তোমাকে বা আমাকে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলতে শুরু করল। কেউ হয়ত ভালো কথা বলল কেউ খারাপ অথবা কেই উত্যক্ত করা করা শুরু করল কিম্বা কেউ আদর করে খাইয়ে দিল তখন আমার কেমন লাগবে!! আথবা আমি পাগল হয়ে গেলাম আর আমার সাথে এমনটি ঘটতে থাকল তখন তোমার কেমন লাগবে?
সবই বুঝলাম কিন্তু তোমার উদ্দেশ্যটা বুঝলাম না- তার মায়ের কনফিউশন।
আমার উদ্দেশ্য খুবই ক্লিয়ার, এই সমস্ত পাগল পাগলী যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তাদেরকে বিশেষ কেয়ার নেওয়া দরকার তাদেরকে উত্যক্ত বিরক্ত করা উচিৎ নয়। তাদেরকে ভালোবাসা দরকার সহানুভুতি দেখানো দরকার। কিন্তু দেখা যায় রাস্তার অনেক মানুষ তাদেরকে বিরক্ত করে, উত্যক্ত করে। যা আসলেই উচিৎ নয়- আমার তিশার স্পস্ট জবাব।
তার মা এবার তার আর নিকটবর্তী হয় এবং আদর করতে করতে বলে, কিন্তু তাদেরকে এই বিশেষ কেরার নেওয়ার ব্যবস্থা কে করবে মা!!!
সরকারের উচিৎ প্রতি জেলায় জেলায় অথবা প্রতি বিভাগে বিভাগেি একটি করে পাগল রাখার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেখানে সেই জেলার বা বিভাগের সব পাগলকে যাদের কোন অভিভাবক নেই তাদেরকে থাকা খাওয়ার এবং চিকিৎসা ও পরিচর্যার ব্যবস্থা থাকবে। অথবা আমাদের মধ্যে যারা ধনী মানুষ তাদের উচিৎ এরকম কিছু একটা করা-আমার মেয়ের চোখ যেন জ্বলজ্বল করতে থাকে আর ওর মায়ের চোখ থেকে দু’ফোটা আনান্দশ্রু বেয়ে পড়ে। ওর মা ওর মাথায় হাত বুলায় আর বলে- মা তোমার মত তোমাদের মত ভাবনার মানুষগুলোর খুবই প্রয়োজন যারা সমাজের কথা ভাববে দশের কথা ভাববে অন্যের কথা ভাববে শুধু নিজের কথা নয়।
পুনশ্চ-বিশ্বের সেরা সেরা লেখক যেমন নরম্যান ভিনসেন্ট পিল, ডেল কর্ণেগী, শিব খেরা, শোয়াইব হোসেন ইত্যাদির বই পড়ে থাকি পজেটিভ থিংক বা ভালো কিছু শেখার জন্য কিন্তু আমাদের শিশুরা যে অনেক পজেটিভ কিছু ভাবতে পারে তাদের পজেটিভ আইডিয়া থেকে আমরা অনেক কিছু খুজে পেতে পারি তা আমরা ভাবি না বা গুরত্ব দিই না। তাদের কথাকে তাদের আইডিয়াকে আমরা শিশু সুলভ ভেবে উড়িয়ে দিই এটা একদমই ঠিক না। শিশুদের কথায় গুরুত্ব দিন তাদের আইডিয়াকে মূল্যালন করুন, কাজে লাগান। রাস্তা-ঘাটে পাগল পাগলদেরকে যেন আমরা কোনভাবে কোন কষ্ট না দিই সেদিকে খেয়াল রাখুন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন।
সবশেষে মাদার তেরেসার একটি উক্তি দিয়ে শেষ করি- “তুমি যদি দৃশ্যমান মানুষকে ভালোবাসতে না পার তাহলে ঈশ্বরকে কিভাবে ভালোবাসবে!”
মন্তব্য করুন