আমার জন্য কাঁদে না আর সে...

আমার জন্য কাঁদে না আর সে…

এই লেখাটি আমি আমার ফেসবুক প্রফাইলে পোষ্ট করেছিলাম কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে। যিনি আমার জীবনের সকল প্রেরণার উৎস, আমার চলার পথের আদর্শ, পথহারা পথের আলোর দিশারী আমার দিক নির্দেশক কম্পাস। যে প্রতিনিয়ত আমার মঙ্গল কামনায় মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতালার দরবারে আকুল প্রার্থনা করতেন। পথ চেয়ে বসে থাকতেন আমার চাকুরী স্থল থেকে ছুটিকালীন বাড়ী ফেরার আশায়। কাঁদতেন আমার ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার সময় বুকে জড়িয়ে ধরে।

আমার সে সকল আশা ভরসার স্থল আমার বাবা জান্নাতের অনন্ত পথে পড়ি জমিয়েছেন গত ১২ মহররম, ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক ২২ আগষ্ট, ২০২১ ‍খিষ্টাব্দ, বাংলা ৭ই ভাদ্র ১৪২৮ সকাল ৭.৩০ মিনিট রোজ রবিবার। আমার জন্য কাঁদে না আর সে…

”তুমি কেঁদো না বাবা আগামী ঈদে আমি আবারও বাড়ীতে আসব আবার তোমার সাথে দেখা হবে”।

মাগরিবের সালাত যেন কোন প্রকারেই শেষই করতে পারছি না। বুকের ভিতর থেকে ডুগরে উথলে কাঁন্না চলে আসছে। এই লেখা যখন লিখছি তখনও ঠিক একই অবস্থা। শুধু বার বার কানের ফিতর একটা কথাই ভেসে আসছে… ’আব্বা আর বোঁধ হয় তোদের সাথে দেখা হবে না…….’। আশির্ধো আমার বাবার এই কথা গুলো কেন জানি বুকের ভিতর উথাল পাথাল সৃষ্টি করে দিচ্ছে। আমি জানি সালাতের ভিতর দুনিয়াবী কোন বিষয়ের মোহ বা মায়ায় পড়ে কাঁন্না করা ঠিক নয় তাতে সালাতের খুশু ও খুজু নষ্ট হয়, কিন্তু তার পরেও আমার কাঁন্না বাঁধ মানছে না। আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না।

বাড়িতে মাকে ফোন দিয়ে প্রতিদিন খবর নিই। বাবা কানে শুনেন না বলে তার সাথে তেমন একটা কথা বলা হয় না মার নিকট থেকেই বাবার শরিরের খবর নিয়ে ফোন রেখে দেওয়া হয়। যখন মাঝে মাঝে মনটা খুব বেশী বাবার জন্য কাঁদে তখন মাকে বলি বাবাকে ফোনটা দেওয়ার জন্য কিন্তু কখনই আর বাবার সাথে কথা বলা হয়না কারণ বাবা এখন আর কানে শুনতে পাননা তাই শুধুই বাবার কথা শুনে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আজ যখন বাবার সাথে কথা বলতে চাইলাম তখন বাবা উপরোক্ত গুলো বলছিলেন আর কাঁন্না করছিলেন…’আব্বা আর বোঁধ হয় তোদের সাথে দেখা হবে না…….’।

কান্নায় আমার হৃদয় দুমড়ে মুছড়ে আসছিল আমি আর কথা বলতে পারলাম না। মা ফোন নিয়ে আমাকে কাঁন্না জড়িত কন্ঠে সান্থনা দিলেন।

চাকুরির সুবাদে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করি। সাধারণত বছরে দুই ঈদে বাড়ীতে যাওয়া হয়। কারণ ঈদের সময়কার মত বড় ছুটি ম্যানেজ করা কষ্টকর তাছাড়া চাকুরির দায়িত্ব কর্তব্য এর খাতিরে বড় ছুটি নেওয়াও হয় না, এর পর আবার পথের খরচ ও যাতায়াতের কষ্টতো আছেই। সেই হিসাবে বাড়ীতে গেছি গত কোরবানীর ঈদের সময়। আমার স্পষ্ট মনে আছে কোরবানীর ঈদের ছুটি শেষে যখন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বাড়ী ছাড়ছিলাম তখন আব্বা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বার বার জানতে চাইছিলেন…’আবার কবে আসবি আব্বা? আব্বাকে জড়িয়ে ধরে কথা দিয়েছিলাম রোজার ঈদে। কিন্তু সে কথা রাখতে পারলাম না কোভিড-১৯ পরিস্থীতির কারণে। আল্লাহ্ ভালো জানেন বাবাকে আর কখনও বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারব কিনা ”তুমি কেঁদো না বাবা আগামী ঈদে আমি আবারও বাড়ীতে আসব আবার তোমার সাথে দেখা হবে”।

পুনঃ এই লেখা শেষ করতে করতে মসজিদ থেকে এশার সালাতের আযান ভেসে আসল। কেন জানি মনে হচ্ছে মোয়াজ্জিনের কন্ঠটিও কাপাকাপা কাঁন্না জড়িত। জানিনা মোয়াজ্জিন সাহেবের মনের ভিতর আমার মত এমন কোন কাঁন্না লুকায়িত আছে কিনা নাকি শুধুই আমার মনের ভুল।

হে আমারপরোয়ার দেগার মাবুদ মাওলা, তুমি আমার বাবার সকল সগিরা কবিরা গুনাহ মাফ করে তার ইবাদতের সকল ভুল ত্রুটি মাফ করে তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের নসিব করুন। আমিন, এলাহি আমিন।।

মোঃ শফিকুল ইসলাম প্রিয়

এই প্রকাশনাটির সর্বস্বত্ত লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত। এই প্রকাশনার আংশিক বা সম্পুণাংশ অন্য যেকোন মিডিয়াতে লেখকের নামে ছাড়া অন্য কারও নামে প্রকাশ করা কপিরাইট আইন এ দন্ডনীয় অপরাধ হিসাবে গন্য হবে।...

মন্তব্য করুন

error: কন্টেন্ট কপি এবং পেস্ট protected!!