shofiq.com
shofiqdotcom

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার: এক বিতর্কিত প্রস্তাবনা

ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট, তার বিতর্কিত কার্যকলাপ এবং মন্তব্যের জন্য প্রায়শই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে থাকেন। তার শাসনামলে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই নানা ধরনের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সম্প্রতি, তার সমর্থক এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুসহ কিছু রাজনৈতিক নেতা তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। যদি এই প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি নিঃসন্দেহে নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসের সবচেয়ে নেক্কারজনক ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে।
কেন এই প্রস্তাবনা বিতর্কিত?
ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাবনা বিভিন্ন কারণে সমালোচিত। নোবেল শান্তি পুরস্কার সাধারণত এমন ব্যক্তিকে দেওয়া হয় যিনি বিশ্বে শান্তি, সম্প্রীতি এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। ট্রাম্পের শাসনামলে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা এই মানদণ্ডের সাথে সাংঘর্ষিক:
অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা: ট্রাম্পের শাসনামল আমেরিকার অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তার বক্তৃতা এবং নীতি প্রায়শই জাতিগত এবং সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে তার সমর্থকদের দ্বারা যে হামলা হয়েছিল, তা আমেরিকার গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। এই ধরনের কার্যকলাপ শান্তির বিপরীত।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতি: ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ (America First) নীতি অনেক আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং জোটের ক্ষতি করেছে। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ইরান পারমাণবিক চুক্তি এবং ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করেছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন: তার অভিবাসন নীতি, বিশেষ করে মেক্সিকো সীমান্তে শিশুদের তাদের পরিবার থেকে আলাদা করার মতো ঘটনাগুলো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে এই নীতির তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
নেতানিয়াহুর জোরালো ভূমিকা
ট্রাম্পের নোবেল প্রাপ্তির প্রস্তাবনায় সবচেয়ে জোরালো ভূমিকা রাখতেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে সমর্থন জানিয়েছেন। বিশেষ করে, ইসরায়েল এবং কিছু আরব দেশের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্থাপনে ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে তিনি তাকে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য মনে করেন। তবে, সমালোচকরা মনে করেন, এই ধরনের প্রস্তাবনা মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এর পেছনে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের স্বার্থকে আরও শক্তিশালী করার কৌশল রয়েছে। এই প্রস্তাবনা নোবেল পুরস্কারের মর্যাদাকে রাজনৈতিক খেলার একটি অংশ করে তোলার ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
নোবেল পুরস্কারের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকি
নোবেল শান্তি পুরস্কারের একটি দীর্ঘ এবং মর্যাদাপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে। এটি মহাত্মা গান্ধী, নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং মাদার তেরেসার মতো মহান ব্যক্তিত্বদের অবদানকে সম্মান জানিয়েছে। যদি ট্রাম্পের মতো একজন বিতর্কিত এবং বিভাজন সৃষ্টিকারী ব্যক্তিকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়, তাহলে তা এই পুরস্কারের মৌলিক উদ্দেশ্য এবং মর্যাদাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে। এমন একটি ঘটনা নোবেল কমিটির নিরপেক্ষতা এবং বিচারবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, যা ভবিষ্যতে এই পুরস্কারের গ্রহণযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
উপসংহার
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া এবং সম্ভাব্যভাবে তা বাস্তবায়িত হওয়া বিশ্ব শান্তির জন্য একটি প্রহসনমূলক ঘটনা হবে। এটি কেবল একজন বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানানো নয়, বরং এটি শান্তি ও মানবাধিকারের মূল আদর্শগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন। নোবেল পুরস্কারের মর্যাদা রক্ষা এবং বিশ্বজুড়ে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠাকারীদের সম্মান জানানোর জন্য এই ধরনের প্রস্তাবনাকে সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা উচিত। এটি এমন একটি সিদ্ধান্ত হবে যা কেবল বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও ভুল বার্তা দেবে।

মোঃ শফিকুল ইসলাম প্রিয়

এই প্রকাশনাটির সর্বস্বত্ত লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত। এই প্রকাশনার আংশিক বা সম্পুণাংশ অন্য যেকোন মিডিয়াতে লেখকের নামে ছাড়া অন্য কারও নামে প্রকাশ করা কপিরাইট আইন এ দন্ডনীয় অপরাধ হিসাবে গন্য হবে।...

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমুহ

    Recent Comments